বাংলাদেশের মত একটা দেশে কোন কেন্দ্রীয় ইফতা বোর্ড নাই, বিষয়টা একইসাথে হতাশা, বেদনা ও উদ্বেগের। পৃথিবীর সমস্ত মুসলমানের প্রতি সাতজনের একজন বাংলাদেশি, এদের জীবনের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, এর জন্য কি জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের কোন দায় নাই? একটা কেন্দ্রীয় ইফতা বোর্ড দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আবশ্যিক বিষয়। যদিও এর ফলে সরকারি নিয়ন্ত্রণে সেন্সরড ফতোয়া আসার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু মাথা ব্যাথার সমাধান তো মাথা কেটে ফেলা নয়।

আর জনগণের ইসলাম পালনের পেছনে যে বিশেষায়িত গবেষণা, তার জন্য তো বিনিয়োগ দরকার, ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কাজ হতে পারে বটে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে হলে আপনাকে এর পেছনে খরচ করতে হবে। আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা প্রধানত কলোনিয়াল, তবু কলোনির মালিকরা তাদের নিজেদের নাগরিকদের যে ধর্ম পালনের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়, আমরা তাও দিই না। আমি ব্যাপারটি নিয়ে সামান্য একটু চ্যাটজিপিটি করলাম, তার ফলাফল আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

ফ্রান্স, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকার মত অমুসলিম প্রধান দেশেও মুসলিমদের ব্যক্তিগত সমস্যাবলী সমাধানের জন্য প্রতিষ্ঠান আছে, অথরিটি আছে। কিন্তু আমাদের মুসলিম প্রধান দেশে কোন অথরিটি নাই। ফলাফল আমাদের চোখের সামনে। ওয়াজ নসিহতের মত একটি নিরেট আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান এখন রীতিমত স্ট্যান্ডআপ কমেডিতে পরিণত হয়েছে, ইমাম নিয়োগের নামের এলাকাগুলোতে সব মার্কামারা বদমাশদের কর্তৃত্ব সহ্য করতে হয়। মুড়িমুরকির মত ইসলামি ব্যাঙ্ক খুলে ধর্মব্যবসা করতে থাকে, রুলস রেগুলেশনের কোন খবরদারী নাই। বাংলাদেশের ওপর খুদাতালার খাস রহমত আছে বলে কিছু নিঃস্বার্থ ইফতা বিভাগ আছে, যেখানে আপনি মাত্র এক-দেড়শ টাকা দিয়ে কয়েকজন মুফতির কয়েক ঘন্টা শ্রমসাধ্য একটি সমাধান পেয়ে যান। কিন্তু এভাবে কত দিন। আপনি যদি একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চান, তাহলে নাগরিকদের ধর্ম পালনের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

নিচে চ্যাটজিপিটি হতে প্রাপ্ত অমুসলিম প্রধান দেশের সেইসব সংস্থার একটি তালিকা দেয়া হল, যারা মুসলমানদের নিত্যদিনের সমস্যার সমাধান করে থাকে।
সংখ্যালঘু মুসলিম দেশগুলোতে শরিয়াহ-সংক্রান্ত সংস্থা:
যুক্তরাজ্য (UK):
Islamic Sharia Council (ISC) – এটি ব্রিটেনের মুসলিমদের জন্য পারিবারিক আইন ও বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত শরিয়াহ-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।
Muslim Arbitration Tribunal (MAT) – এটি ব্রিটেনে শরিয়াহ-ভিত্তিক সালিশি ব্যবস্থা পরিচালনা করে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে।
Shariah Advisory Boards for Islamic Banks – যুক্তরাজ্যের ইসলামিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরিয়াহ পরামর্শদাতা বোর্ড রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র (USA):
Fiqh Council of North America (FCNA) – এটি উত্তর আমেরিকার মুসলিমদের জন্য ইসলামিক আইনের পরামর্শ ও ফতোয়া প্রদান করে।
Assembly of Muslim Jurists of America (AMJA) – এটি মূলত মুসলিমদের জন্য শরিয়াহ-ভিত্তিক নির্দেশনা দেয়, বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়গুলোতে।
ফ্রান্স:
French Council of the Muslim Faith (CFCM) – এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও আইনি বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে।
National Council of the Muslim Worship (CFCM - Conseil Français du Culte Musulman) – এটি ফ্রান্সের মুসলিমদের জন্য শরিয়াহ-সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ ও ধর্মীয় ফতোয়া প্রদান করে।
কানাডা:
Islamic Institute of Toronto (IIT) – এটি শরিয়াহ ও ইসলামিক ফাইন্যান্স সংক্রান্ত গবেষণা করে।
Canadian Council of Imams (CCI) – এটি মুসলিম সমাজের শরিয়াহ ভিত্তিক পরামর্শ ও গাইডলাইন প্রদান করে।
অস্ট্রেলিয়া:
Australian National Imams Council (ANIC) – এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের শরিয়াহ সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা করে এবং ধর্মীয় ফতোয়া প্রদান করে।
জার্মানি:
Islamic Council for the Federal Republic of Germany – এটি শরিয়াহ ও মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে কাজ করে।
Zentralrat der Muslime in Deutschland (ZMD) – এটি শরিয়াহ-ভিত্তিক সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়গুলোতে পরামর্শ প্রদান করে।
ভারত:
All India Muslim Personal Law Board (AIMPLB) – এটি ভারতের মুসলিমদের ব্যক্তিগত আইন, পারিবারিক আইন, ও শরিয়াহ ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
Muslim Judicial Council (MJC) – এটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শরিয়াহ-ভিত্তিক পারিবারিক আইন ও ফতোয়া প্রদান করে।
এই সংস্থাগুলো শরিয়াহ-ভিত্তিক আইনগত পরামর্শ, ইসলামিক ফাইন্যান্স, পারিবারিক ও সামাজিক আইন, এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে। যদিও এসব দেশে শরিয়াহ আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক নয়, মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শেষ জবানবন্দী

ইজতিমার ময়দানে কোন একটা কাজে বিদেশি কামরার ভেতরে যাওয়া সুযোগ হয়েছিল। আরব খিমার ভেতরে খানিকটা চোখু বুলাতেই মুসলিম উম্মাহর বর্তমান চিত্র চমৎকারভাবে ফুটে উঠল, বিশাল বিশাল বপু, দৌড়ঝাপ তো দূরে থাক, ঠিক মত হাঁটাচলা করাও এদের পক্ষে সম্ভব না। রীতিমত অসুস্থ্য শরীর একেকজনের, গাদা গাদা মাংস শরীরে। বোঝাই যায়, ভোগী জীবন। আরব রাষ্ট্রগুলো মার্কিনিদের হাতে সব দায়দায়িত্ব সঁপে দিয়ে যেভাবে ‘খাওয়া দাওয়ায়’ লেগে গেছে, তার একটা চমৎকার চিত্র এখানে দৃশ্যমান। আমি মনে প্রাণে চাই, দ্রুতই আরব বিশ্বের অঢেল সম্পদ ফুরিয়ে যাক, ওরা গরিব হয়ে যাক যেমন ছিল সত্তর বছর আগে। তাহলে হয়ত এদের হাতে আবারও মুসলিম উম্মাহর নিয়ন্ত্রণ আসতে পারে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ইজতিমায় একসাথে এতগুলো অসুস্থ্য মানুষ আরেক জায়গায় দেখা যায়, শনিবার সকাল দশটায় আলেমদের বয়ানের মজমাতে।