🏷️ For paid promotion : @Abshab77
Last updated 2 days, 11 hours ago
EXPOSING হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ!
— ধর্ম ও ইতিহাস আলোচনা
Last updated 1 month, 3 weeks ago
Last updated 5 months, 3 weeks ago
১৯৪৬ এ নোয়াখালী প্রসঙ্গ
"... নোয়াখালী জেলার দাঙ্গার কারণ সম্পর্কে অনেক অলীক কাহিনী প্রচারিত হয়েছিল। বিশেষ করে কলিকাতার হিন্দু পত্রপত্রিকাগুলিতে। দাঙ্গায় নোয়াখালীর দত্তপাড়া চৌধুরী বাড়ির জনৈক যুবককে কলিকাতায় মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা সংগঠিত করতে দেখেছিল এলাকারই একটি মুসলিম যুবক। মুসলিম যুবকটি কোনো প্রকারে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল উক্ত দাঙ্গাকারীদের আক্রমণ থেকে। সেই মুসলিম যুবকটি নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে কলিকাতায় মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় উক্ত চৌধুরী বাড়ির যুবকটির ভূমিকা এলাকার মুসলমানদের নিকট সবিস্তারে বর্ণনা করে। ফলে উক্ত দত্তপাড়া এলাকাতেই সীমিত আকারে দাঙ্গা সংগঠিত হয়।
খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঢাকা থেকে আমি আমার জেলায় চলে যাই এবং হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাবিরোধী জমায়েত করি কয়েকটি। আমার এলাকার হিন্দু-মুসলিম সকলেই দাঙ্গার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। ফলে ছিটেফোঁটা দু'একটি জায়গায় সমাজবিরোধী কিছু লোক হিন্দু বাড়িতে দু'একটি লুটের ঘটনা সংঘঠিত করেছিল; কিন্তু দত্তপাড়ার বাইরে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। সন্দ্বীপ থানায় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী কমরেড লালমোহন সেন দাঙ্গাবিরোধী জনমত সংগঠিত করতে গিয়ে কতিপয় মুসলমান গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। কিন্তু দাঙ্গা বিস্তার লাভ করেনি।
কিন্তু কলিকাতার হিন্দু পত্রপত্রিকাসমূহ নোয়াখালীর দাঙ্গার খবর এত অতিরঞ্জিত করেছিল যে, শেষ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধীকে নোয়াখালীর দাঙ্গা উপদ্রুত অঞ্চলে যেতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন যার ফলে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুধু কমই হয়নি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যকার সম্পর্কেরও বিশেষ উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তৎকালীন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কর্মী হিসেবে আমি রামগঞ্জস্থ গান্ধী আশ্রমে মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম এবং এলাকার হিন্দু-মুসলিম কর্মী সাধারণের উপর তার শুভ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।
,
একথা সত্য যে, মহাত্মা গান্ধীর নোয়াখালীতে অবস্থান ঐ জেলায় এবং সমগ্রভাবে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের উন্নতির সহায়ক হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব পরিসরে এবং বিশেষ করে ভারতের বিহার প্রদেশ, সমগ্র উত্তর-ভারতে ও পরবর্তীকালে পাঞ্জাব প্রদেশে এর প্রতিক্রিয়া হয়েছিল খুবই খারাপ এবং ব্যাপক। ৬ লক্ষাধিক মানুষ এই দাঙ্গার বলী হয়েছিল।
নোয়াখালীতে মহাত্মা গান্ধীর একটানা দীর্ঘকাল অবস্থানের ফলে সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল বাংলাদেশের উপর, যেখানে মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা ক্ষমতাসীন ছিল। জনাব সোহরাওয়ার্দীর ন্যায় একজন অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন উদার মুসলিম নেতা ও তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কলঙ্কিত হবে বলে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম।
বস্তুত কংগ্রেস সমর্থক হিন্দু পত্রপত্রিকাসমূহ জনাব সোহরাওয়ার্দী ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে একটানা কুৎসা রটনা করে চলেছিল। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে বাংলার বাইরে বিহার ও উত্তর ভারতের হিন্দু জনসাধারণের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর ফলে অচিরেই বিহারে মুসলিমবিরোধী ব্যাপক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল এবং ক্রমশ তা সমগ্র উত্তর-ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বলা বাহুল্য যে, ঐ সমস্ত হিন্দু প্রধান প্রদেশগুলিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল আণুবীক্ষণিক সংখ্যালঘু।
সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠিত আক্রমণের মুখে মুসলমান নারী পুরুষ এবং শিশু প্রাণ হারাল, তাদের বাড়িঘর লুণ্ঠিত ও ভস্মীভূত হলো। গান্ধীর নোয়াখালীতে একটানা অবস্থান উপরোক্ত দাঙ্গার ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করেছিল এবং কলকাতার হিন্দু পত্রপত্রিকাসমূহ ভারতব্যাপী নোয়াখালীতে হিন্দুবিরোধী দাঙ্গার কাল্পনিক ঘটনাবলীর এক লোমহর্ষক চিত্র তুলে ধরেছিল। সমগ্র বিহার এবং উত্তর-ভারত জুড়ে মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এমন বিস্তৃতি লাভ করেছিল যে, একটানা প্রায় চার মাস ধরে সেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জীবন রক্ষার্থে দাঙ্গা প্রতিরোধ সংগ্রাম চালাতে হয়েছিল। ফলে সমগ্র বিহার এবং উত্তর-ভারত রীতিমত একটি গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করা হলো। তাদের বাড়িঘর লুণ্ঠিত ও অগ্নিদগ্ধ হলো। আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছুই ছিল না। অগত্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী তলব করতে হলো। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীতেও বিস্তার লাভ করেছিল। পাঞ্জাবি, শিখ, পাঠান প্রভৃতি রেজিমেন্টের লোকেরা ভুলে গিয়েছিল যে তারা মানুষ। ফলে সেনাবাহিনী ভূমিকা পালনে ছিল হয় পক্ষপাত দুষ্টু না হয় অসহায় মনুষ্যত্ব বলী হলো সর্বত্র॥"
— কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা / স্মৃতিকথা ॥ [ বাঙ্গালা গবেষণা - জুন, ২০২২ । পৃ: ৮০-৮১ ]
©️ কায় কাউস
🏷️ For paid promotion : @Abshab77
Last updated 2 days, 11 hours ago
EXPOSING হিন্দুধর্ম ও হিন্দুত্ববাদ!
— ধর্ম ও ইতিহাস আলোচনা
Last updated 1 month, 3 weeks ago
Last updated 5 months, 3 weeks ago